নভেম্বর ২৩, ২০১১

ফাটা বাঁশে বিচি আটকানোর গল্প (স্বাস্থ্যসেবার চালচিত্র)

ফাটা বাঁশে বিচি আটকানো'র বা মাইন'কা চিপায় ফাইস্যা যাওয়ার বর্ণনা কিঞ্চিৎ অশ্লীলতাদোষে দুষ্ট; যদিও বিষয়টি মোটেই সুখকর কিছু নয়, বরং উদ্ধারের পুর্ব পর্যন্ত কষ্টকর-বেদনাদায়ক,উদ্ধার পরবর্তী যন্ত্রনাও কিছু কম নয়। আমাদের পুরো জাতি পড়েছে এই মাইন'কা চিপায়। সব খাতেই এই অবস্থা। লিখছিলাম স্বাস্থ্য-সেবা নিয়ে, এই খাতের ভোক্তাদের মাইন'কা চিপায় পড়ার গল্পই আজ আরো খানিকটা বলি। না, থাক। শুরুর আগে অন্য কথা বলে নেই। এই লেখাটা চলাকালে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ বলেছেন সরকারী হাসপাতাল থেকে সু-চিকিৎসা পেয়ে হাসি মুখে রোগীদের বাড়ি ফেরার গল্প। নিশ্চয়ই, এরকম আকছারই ঘটে; প্রায় ষোল কোটি মানুষের এই দেশে এরকম কিছু ঘটনা না ঘটাই দারুন অস্বাভাবিক। অনেক নিবেদিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী নিশ্চয়ই আছেন, যারা নিরলস কাজ করেন। কিন্তু এটা কি সার্বজনীন চরিত্র? আসুন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য স্থাপনা সমূহে কর্মীদের অনুপস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের একট জরিপ প্রতিবেদন থেকে কিছু পরিসংখ্যানের দিকে একনজর তাকাই। এ জরিপটি হয়েছিলো ২০০২ সালে, সম্ভবত অবস্থার এখনো অবধি তেমন পরিবর্তন হয়নি।
রিপোর্ট'টির শিরোনাম অদ্ভুত 'Ghost Doctors: Absenteeism in Bangladeshi Health Facilities '। এ রিপোর্টের[১৪] একটি ছক বাংলায় হুবহু তুলে দিলাম পাঠকের জন্য।
সেই জরিপের নমুনায় ডাক্তারদের শুন্য পদ ছিলো মোট পদের ৪১%; সরকারের সৃষ্ট পদ অনুযায়ী প্রতি ১ লক্ষ লোকের জন্য ছিলো ২০ জন ডাক্তার, শুন্য পদের হিসাব (৪১%) বাদ দিলে দাড়ায় ১২ জন ডাক্তার প্রতি ১ লক্ষ লোকের জন্য, ৪২% অনুপস্থিতির হার ধরলে প্রতি ১ লক্ষ লোকের জন্য ডাক্তারের সংখ্যা দাড়ায় ৮.৪ জন। এটা সাধারন চিত্র, ভাবুনতো সেই 'উন্নিত পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র' এর ভোক্তাদের যেখানে ডাক্তার'দের অনুপস্থিতির হার ৭৪%। সেবা দেবা'র লোকটাই নেই, শুধু স্থাপনাই দাড়িয়ে আছে। রোগীদের হাসি মুখে ফিরে যাওয়ার গল্প, তাই অল্প। স্বাস্থ্য স্থাপনা সমুহে স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের এই অনুপস্থিতির কারন অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। অন্তত দুটো বিষয় স্পষ্ট; ১। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের অনুপস্থিতিকালীন সময়ের অপরচুনিটি কষ্ট (opportunity cost) সরকারী কাজের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার চেয়ে বেশী, ২। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে বা আদৌ নেই। এই দুটো বিষয়ের সাথেই জড়িয়ে আছে বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমূহের ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা। দেশে সরকারি অনুমোদন নিয়ে ২৭১৮টি প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ৪৫৯৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার-প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি পরিচালিত হলেও অবৈধভাবে প্রায় দেড় লাখ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বলে জানা যায়। ক্লিনিকের আয়া থেকে ক্ষূদ্র মাছ ব্যবসায়ী সকলেই গর্বিত ক্লিনিক মালিক, যদিও সেগুলো ক্লিনিক হিসাবে আখ্যা পাবার নূন্যতম যোগ্যতা ধারণ করে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে 'সর্ষের মধ্যেই ভুত আছে' মানে কি না 'দি মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৮২' এটা অনেক পুরানো, প্রায় অচল, অকার্যকর [১৫]; এর ফাক-ফোকড় দিয়েই গজাচ্ছে অবৈধ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদফতর ভূতের আছর মুক্ত না হলে রোগীদের হাসি মুখে ফিরে যাওয়ার অল্প গল্পও কালে আরো দুর্লভ হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হলো এই পুরানো, প্রায় অচল, অকার্যকর 'দি মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৮২; কেন এখনো অবধি যুগপোযোগী করা হচ্ছে না? হয়নি? কার স্বার্থে? অনেকে বলেছেন চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। নিশ্চয়ই! তবে স্বাস্থ্য-অর্থনীতি অনুযায়ী চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে যে সম্পর্ক তা হচ্ছে সেবা বিক্রেতা আর সেবা গ্রহীতা'র; মানে একটা 'লেনা-দেনা'র সম্পর্ক। রুগি যখন গাঁটের টাকা দিয়ে বা সরকারী হাসপাতালে নিজের সংবিধান স্বীকৃত অধিকারের জোরে ভোক্তা, মানে 'লেনে-ওয়ালা', তখন উপযুক্ত সেবা না পেলে উস্মা-রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করবেই। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের কথা আসতো না যদি সেবা'র সঠিক মান-নিয়ন্ত্রন হতো । কিংবা রাষ্ট্র যদি না সংবিধান স্বীকৃত চিকিৎসার অধিকারকে কোন রকম সংজ্ঞা'য় বাধতো। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা পত্র লিখে দিয়েই খালাস! যেন খোস-পাঁচড়া থেকে ক্যান্সার অবধি সকলের সব চিকিৎসাই করবে সরকার। সংবিধান স্বীকৃত চিকিৎসার অধিকারের প্রায়োগিক চিত্র তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাংলা ভাষা'র সেই প্রবাদ'টি 'ঘটি ডুবে না নামে তাল-পুকুর!' আজকাল আমাদের দেশে বহুজাতিক/দেশী কোম্পানী/কর্পোরেটের গুণকীর্তণ করার কিছু পান্ডা গজিয়েছে। কেউ কেউ'তো আগ-বাড়িয়ে এমনও বলতে ছাড়েননি যে দেশের যা কিছু উন্নয়ন তা ঘটছে ওইসব কর্পোরেটদের দয়া-দাক্ষিণ্যে। বাংলাদেশে 'তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির' ১৩ বছরের আন্দোলন চলার পরো এদেশে বহুজাতিক-লুটেরা পুঁজির 'নুন-খাওয়া' লোকের অভাব নেই; যারা সেই যৎসামান্য নুনের লোভে দেশের প্রতি বেঈমানী করেন অবলীলায়। বহুজাতিক কর্পোরেট/কোম্পানীর বাহ্যিক চাক-চিক্যে 'নুন-খাওয়া'দের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়, অন্তর্গত শোষণের দিকটায় ওদের 'মায়োপিক' চোখের দৃষ্টি পৌছায় না। কোম্পানীর নুন-খাওয়া এক 'মীর জাফর'রের জন্য আমরা আজ ২৫৪ বছর ধরে ভুগছি। কাজেই চিনে নেয়া প্রয়োজন মুনাফালোভী বহুজাতিক কোম্পানী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের চরিত্র। মুনাফা লোটার ক্ষেত্রে, অন্তত স্বাস্থ্য-সেবায়, দেশী/বিদেশী কর্পোরেটের চরিত্রে আপাত কোন ভিন্নতা নেই। বরং দেশী ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ এক কাঠি সরেস! স্বাস্থ্য-সেবায় নিয়োজিত তাবৎ (বিশেষজ্ঞ) চিকিৎসকদের প্রতিনিয়ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ও নিত্য-নতুন কার্যকর ঔষধ সম্পর্কে পড়াশুনা করে জ্ঞান হালনাগাদ করতে হয়। আমাদের দেশে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এদিকটি একেবারেই অবহেলিত। এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানী ও তাদের এদেশীয় দোসর'রা। ডাক্তার'রা যতোটা মেডিকেল জার্নাল পড়েন, সম্ভবত তার চেয়ে বেশি পড়েন ঔষধ কোম্পানীর 'পুস্তিকা'; যতোটা লেকচার-সেমিনারে সময় দেন সম্ভবত তারচেয়ে বেশী সময় দেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের; সময় অবশ্য ভাগ হয়, কোম্পানীর ওজন বুঝে। এইসব রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাজ হলো তোতাপাখির মতো করে ডাক্তারদের ওষুধের ব্র্যান্ড নাম মুখস্থ করানো। যাতে জেনেরিক নামের পুরনো অথচ কার্যকর ওষুধ থাকা সত্বেও তাদের নিজ নিজ কোম্পানীর ব্রান্ড নামের ওষুধের বাজার সম্প্রসারিত হয়। ভাবুন তো আমাদের এই ছোট দেশে প্রায় কুড়ি হাজার মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রতিদিন এই কাজে ব্যস্ত। চিকিৎসক'রা ওষুধের 'জেনেরিক নাম' বা মূল নাম শিখেই চিকিৎসক হন, কিন্তু ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক'রা ওষুধের 'ব্রান্ড নাম' ব্যবহার করেন। এভাবেই একজন ব্রান্ড নাম শেখা 'তোতাপাখি চিকিৎসক' কর্পোরেটের প্রতিনিধিতে পরিনত হন। সাধারনত ব্রান্ড নামের ওষুধের দাম জেনেরিক নামের ওষুধের চেয়ে অনেক বেশী হয়। রোগী'কে বাধ্য হয়ে বেশী দামে ওষুধ কিনতে হয়, মুনাফা বাড়ে কর্পোরেটের। ছোট উদাহরন দেই, আমরা ব্যাথা বা জ্বর হলে যে প্যারাসিটামল কিনি তা কিন্তু জেনেরিক নাম, কিন্তু কোন চিকিৎসক যদি ব্যবস্থাপত্রে 'নাপা' বা 'এইস' লিখেন তখন কিন্তু মুনাফা যায় ওই ব্রান্ডের উৎপাদনকারীর কাছে। আরো একটি কাজ অনেক চিকিৎসক করেন তা হলো অপ্রয়োজনে ওষুধ, বিশেষত এন্টিবায়োটিক, প্রেসক্রাইব করা; এক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্ক রোগীদেরও ছাড় নেই [১৬]। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আরো একটি নাজুক দিক হচ্ছে, প্রেসক্রিপশন ড্রাগস ও ওটিসি (over the counter),যে ওষুধ বিনা প্রেসক্রিপশনে কেনা যায়, ড্রাগস এর মধ্যে কোন কার্যকর পার্থক্য না থাকা। এখানে সকলেই ডাক্তার; ক্রেতা, ওষুধের দোকানের বিক্রেতা থেকে শুরু করে হাসপাতালের আয়া পর্যন্ত। প্যারাসিটামল থেকে এন্টিবায়োটিক সবই মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে; ভুল হলো, আজকাল সম্ভবত মুড়ি-মুড়কিও এতো সহজলভ্য নয়। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যিনি বাংলাদেশের ওষুধ নীতি প্রনয়নে মূল ভুমিকা রেখেছিলেন, কিছুকাল আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে ১৯৯৫ এর পর থেকে ওষুধের দাম অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে। ভূমিদস্যুর মতো অনেক ওষুধ ব্যবসায়ীও দস্যু হচ্ছেন এবং এই সেক্টরে একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারাই মুনাফার জন্যা ৫০ পয়সায় উৎপাদিত ওষুধের বিক্রয় মূল্য ১২ টাকা করে ওষুধ উৎপাদনে নকলবাজদের আমদানী করেছেন [১৭]। একটা বিস্ময়ের বিষয় হলো বাংলাদেশের অধিকাংশ ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেনেরিক ওষুধ তৈরী করেন, যা পেটেন্টে'র আওতার বাইরে, অথচ ওষুধের দাম নির্ধারনের ক্ষেত্রে তারা কারুর'ই পরোয়া করেন না। এমনকি কোন কোন জেনেরিক ওষুধের দাম বাংলাদেশে ব্রান্ডেড ওষুধের চেয়ে বেশী। এরকম অদ্ভুত কান্ড সম্ভবত বাংলাদেশেই সম্ভব! ওষুধের দাম নাগালে রাখার তিনটি স্বীকৃত উপায় হলো-১। দীর্ঘ এসেনশিয়াল ড্রাগ লিস্ট তৈরি করা, যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল ওষুধের উৎপাদন অব্যাহত রেখে নির্দিষ্ট মূল্যে ভোক্তার কাছে সহজলভ্য করা যায় ২। ওষুধের মূল্য নির্ধারনে প্রশাসনের নজরদারি করা, ৩। সরকার নিজেই উদ্দোগী হয়ে জরুরী ওষুধ তৈরি করা। প্রথমটির ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু কাজ হলেও এ তালিকা আর আপডেট হচ্ছে না; বাংলাদেশে জরুরী ওষধের তালিকায় আছে ২০৯ রকমের ওষুধ অথচ প্রতিবেশী ভারতের তালিকায় আছে ৩৪৮ টি ওষুধ। আর ওষুধের মূল্য নির্ধারনে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কার্যত কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারী ক্রয়ে অনেক সুবিধা পেয়েও একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠান 'অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড' ( EDCL) এখনো অবধি তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। মনে আছে নিশ্চয়ই যে, ২০০৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল ওষুধ খেয়ে ২৪ শিশু কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। ঔষধের মান-নিয়ন্ত্রনের এ বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের, তারা তখন মান নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি, এত বড় বিপর্যয়কর ঘটনার পরো তাদের এই বিষয়ে কোন কার্যকর সক্ষমতা গড়ে উঠেনি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওষুধের মান নিয়ন্ত্রনের সক্ষমতা গড়ে না উঠা কতখানি জন-বান্ধব (people's friendly)? এ অক্ষমতা প্রকারান্তরে দেশী/বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনের সহায়ক নয় কি? এ বিষয়ে বিস্তর ভাবনা চিন্তার সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দেশের ১৫১টি ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২২ টি প্রতিষ্ঠান কে মান সম্মত উপায়ে উৎপাদন ও বিপনন করতে দেখেছে, যারা ১৯৮২ ও ২০০৫ সালের ওষুধনীতির পরামর্শ মেনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস’ অনুসরণ করছে। তারা ৬২ টি প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ করে দিতে ও ৪১ টি'কে সংশোধনের সুযোগ দিতে সুপারিশ করেছে। কিন্তু, এই সুপারিশ খুব কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না, কেননা 'বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি' চাইছে না কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হোক [১৮]। মানুষের জীবন,ভলো স্বাস্থ্য এসব ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা 'বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি'র কাছে বোধকরি কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। যেন-তেন প্রকারে মুনাফা অর্জনেই তাদের মোক্ষলাভ। ঔষধ যেখানে জীবন রক্ষাকারী উপকরন সেখানেই যদি ভেজাল নিয়ন্ত্রন না করা যায়, বা মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয় তবে তা কতোটা ভাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নির্মানে সহায়ক হয়? এ প্রশ্ন পাঠকের জন্য রইলো। বার্লিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন ২০১১ এর প্রাসঙ্গিকতায় এ লেখার শুরু । আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সেখানে তার সূচনা বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা'কে বৈশ্বিক চ্যালঞ্জ হিসাবে উল্লেখ করে তা সবার জন্য অবারিত করতে ও সাধ্যের মধ্যে আনতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উৎসের সম্পদ কাজে লাগানোর কথা বলেছেন [১৯]। আশা রইলো পরবর্তী পর্বে সরকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য-সেবার অর্থায়ন ও সংবিধানের স্বীকৃত চিকিৎসার অধিকার প্রসঙ্গে অন্যান্য কিছু দেশের সাথে তুলনামূলক আলোচনা করবার। (আগামী পর্বে সমাপ্য)
রেফারেন্স
১৪। Chaudhury & Hammer.2003. Ghost Doctors: Absenteeism in Bangladeshi Health Facilities ,World Bank Policy Research Working Paper 3065, May 2003
১৫। সাঈদুর রহমান রিমন,২০১১। বিপন্ন স্বাস্থ্য সেবা ২- দেড় লাখ ভুয়া হাসপাতাল-ক্লিনিক,বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ নভেম্বর ২০১১
১৬। মশিউল আলম, ২০১১। জনস্বাস্থ্যঃ আমরা কি অতিরিক্ত ওষুধ খাচ্ছি? প্রথম আলো, ২৮ জুন ২০১১।
১৭। যথাযথ মনিটরিং নেই বলেই বাজারে নকল ওষুধ বাড়ছে : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাপ্তাহিক বুধবার, ২৪ অক্টোবর ২০১০
১৮। শেখ সাবিহা আলম,২০১১। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন: ৮৫ ভাগ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম মানছে না, প্রথম আলো, ২৬ আগষ্ট ২০১১।
১৯। সুমন মাহবুব, ২০১১। স্বাস্থ্যসেবা সাধ্যে আনা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ: হাসিনা,বিডিনিঊজ২৪.কম,২৩ অক্টোবর ২০১১।